The Silver Jubilee of BCS was celebrated in 1997. We are curating a series of articles, photos, and videos to recreate the celebration.
রজত জয়ন্তীর স্মৃতি
প্রবর ঘোষ
১৯৯৭-এর জানুয়ারির এক হিমশীতল তুষারঝড়ের রাতে আমি আর শুভশ্রী ক্লীভল্যান্ডে এসে পৌঁছলাম। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা আর গবেষণা করার সুবাদে ক্লীভল্যান্ডের বাঙালীদের অনেকের সংগেই পরিচিতি ছিল; বঙ্গ সংস্কৃতি সংস্থার (BCS) কথাও একটু আধটু জানতাম, যদিও ভেবেছিলাম সরাসরি অংশগ্রহণ করবো না পাছে কাজে অমনোযোগী হয়ে যাই।
এখানে এসে সেবারের ‘cultural secretary’ সন্দীপের সংগে পরিচয় হলো। ওর কাছে শুনলাম সেবারের রজত জয়ন্তী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা। ‘রক্তকরবী’ নাটকে অভিনয়ের আমন্ত্রণ সবিনয়ে ফিরিয়ে দিলাম, যদিও পুরনো বন্ধু চিন্ময়ের সংগে কবিতার অনুষ্ঠানের script তৈরিতে খুব আনন্দ পেলাম। এখানে আসার পরের দিনই রতনদার সংগে পরিচয় হয়েছিল; তাঁর প্রশ্রয়ে কাজের ফাঁকে কবিতা পাঠের প্রস্তুতি মহা আনন্দে চলতে লাগল। ঘটনাচক্রে ‘রক্তকরবী’ নাটকের দলে ঢুকতেই হলো, তবে পরিচালক সন্দীপের অনুগ্রহে এমন এক ভূমিকায় নেওয়া হলো যাতে সংলাপ মুখস্থ করার ব্যাপার নেই আর স্টেজে ঢুকে হাত-পা কাঁপবে সে সম্ভাবনাও নেই- কারণ পুরোটা অভিনয়টাই নেপথ্য থেকে; হ্যাঁ, কেউ কেউ ঠিক ধরেছেন- রাজার পার্ট। আমার মতো সম্পূর্ণ অচেনা একজনকে ‘রক্তকরবী’তে রাজার পার্ট করতে দিয়েছিল সন্দীপ; কোন সাহসে কে জানে। তবে সাহস (বা দু:সাহস) যে ওর (এবং রতনদার) বিলক্ষণ ছিল তা এই লেখা আরেকটু পড়লে আপনারা সবাই বুঝবেন।
প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় রতনদা এসে আমাকে আর শুভশ্রীকে নিয়ে যেতেন ICC-তে রিহার্সালে। আর রিহার্সালের পর রতনদা-বাসবীদিদের বাড়ীতে আড্ডা চলতো ভোর রাত পর্যন্ত। সে যে কি এক আনন্দের স্মৃতি তা যারা সেই মহড়ায় ছিলেন তাঁরা সবাই মানবেন। মাঝে মাঝে দিব্যেন্দুদা-সুমিত্রাবৌদিদের বেসমেন্টে রিহার্সাল হতো- দিব্যেন্দুদা, জহরদার কথা আলাদা করে মনে আছে; কারণ ওনাদের কথাতেই প্রথম মনে হয়েছিল অভিনয়ে হয়ত উৎরে যাবো। অপরাজিতাদি-অমিতাভদা মাঝেমাঝে আসতেন উৎসাহ দিতে। সব কিছু পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছিল কিন্তু নাটকের দিন দশেক আগে হঠাৎ বর্ষণদার বাবা মারা গেলেন। বর্ষণদা সর্দারের চরিত্রকে জীবন্ত করে তুলছিল অসাধারণ অভিনয়ে। ফলে বর্ষণদার অনুপস্থিতিতে নাটক প্রায় বন্ধ হবার মুখে। রতনদা আর সন্দীপ অনেক চেষ্টায় কাউকে অভিনয়ের জন্য রাজী করাতে পারলেন না। অত:পর আমাদের জানানো হলো দুটো সম্ভাবনার কথা। এক, নাটক বন্ধ। দুই, যেহেতু নতুন কাউকে পাওয়া গ্যালো না তাই নাটকের দলের থেকেই কাউকে সর্দারের অভিনয় করতে হবে এবং এমন কাউকে যাকে দর্শক অন্য ভূমিকায় দেখবে না। এরকম অভিনেতা একজনই ছিল নাটকে যে রাজার ভূমিকায় নেপথ্যে থেকে অভিনয় করছে- অর্থাৎ আমি। যে মুহূর্তে কথাটা শুনলাম শিড়দাঁড়া দিয়ে যেন একটা হিমস্রোত নেমে গ্যালো। অভিনয়ে মনোযোগী হবার জন্য আমার পার্ট না থাকলেও পুরো নাটকটা বসে বসে শুনতাম সেটা যে আমাকে এতবড় বিপদে ফেলবে তা দু:স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু নাটকের অভিনয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত্য যে কি ভয়ে ভয়ে কেটেছিল তা ভাবলে আজও শিউরে উঠি। আজ কেউ ক্লীভল্যান্ডে, কেউ বেএরিয়ায়, কেউ মুম্বাই-এ, কেউ মেরিল্যান্ডে, কেউ টেক্সাসে-কিন্তু সেদিনের সুখস্মৃতি এখনো অম্লান।
নাটক আর কবিতার অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে রজত জয়ন্তী উদযাপনের আর কোন প্রস্তুতিতেই আমি সরাসরি সামিল ছিলাম না। তবে কবীর সুমনের সংগে আমার পূর্ব পরিচিতির কথা শুনে শুভাদি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ক্লীভল্যান্ডে থাকাকালীন ওনার দেখাশোনা করার। রতনদার দৌলতে সেই দায়িত্বেও কোন রকমে উৎরে গেছি আর বাংলা সঙ্গীতের এক কিংবদন্তির সংগে দু-তিনদিন অনেক সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়েছে।
২৪ বছর পর রজত জয়ন্তীর সব অনুষ্ঠানের কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ মনে নেই। কিন্তু মনে আছে BCS সদস্যদের আগ্রহের, ভাল লাগার নানান স্বাদের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সদস্যদের এবং আমন্ত্রিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে সপ্তাহান্তের তিনটে দিন খুবই আনন্দময় ছিল। কবিতা, গান, নাটক, নৃত্যনাট্য, ছোটদের নিয়ে Musical Ensemble, আলোচনা সভা সবেরই আয়োজন ছিল Tri-C (Metro)-তে অনুষ্ঠিত সেই সাংস্কৃতিক মহোৎসবে। ছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কবীর সুমনের মত নামী শিল্পীরা। নানান দেশের শিল্পীদের নিয়ে রীতা মুস্তাফির পরিচালনায় ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ নৃত্যনাট্য দেখতে সমবেত হয়েছিলেন ক্লীভল্যান্ডের সংস্কৃতি অনুরাগী বিভিন্ন দেশের মানুষ। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমার মত সদ্য ক্লীভল্যান্ডে আসা একজন বাঙালীর কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছিল এখানকার বাঙালীদের বাংলা সংস্কৃতির প্রতি টান ও ‘পরকে আপন করে’ নেওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা- যা ক্লীভল্যান্ডের বঙ্গ সংস্কৃতি সংস্থার জীবনিশক্তি।
Image courtesy Ashoke & Swapna Banerjee